আনহার সমশাদঃ ১৯৫৬ সালে প্রতিস্টিত ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি চরম অব্যবস্থাপনায় পতিত হয়েছে কয়েক বছর ধরে।লাইব্রেরী হঠাৎ করে সংকটাপন্ন হয়নি। কতিপয় পদলিপ্সু ব্যাক্তি’র নানা রকম অত্যাচারে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে এখন মুমূর্ষু আকার ধারণ করেছে।সামান্য কয়েক হাজার টাকা সম্মানী নিয়মিত পরিশোধ করার সামর্থ্য কি ধনাঢ্য জেলাবাসী’র নেই? মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ও ৮৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় শহরবাসীর উপর দিয়ে যেমন দূর্যোগ বয়ে গেছে,প্রাচীন এই প্রতিস্টান ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। কালের বিবর্তনে জেলা পরিষদের জমি’র উপর অনেকটা বল করেই ঠিকে ছিলো স্বমহিমায়। সাহিত্য- সংস্কৃতির উন্নয়নে কোটি টাকা ব্যয়ে যখন আধুনিক ভবনের রুপান্তরিত হলো তখনি কয়েক হাজার টাকার ব্যয় সংকুলান করতে পারছেনা পরিচালনা কমিটি?
অতএব এই প্রতিস্টানের সভাপতি (পদাধিকার বলে)জেলা প্রশাসক।লাইব্রেরীয়ান, অফিস সহকারী, পিয়ন- ঝাড়ুদার সহ মাত্র ৪ব্যাক্তির জনবল দিয়ে চলছিলো প্রতিস্টানটি।বেতন না পেয়ে দ্বারে-দ্বারে র্ধণা দিয়েছে।কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। এই খেটে খাওয়া মানুষ গুলো নিরুপায় হয়ে সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে।
১/১১’র পরিবর্তিত সরকারের সময়ে ২০০৮ সালে প্রথম সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন হয়।
নির্বাচনে ১৭ সদস্য নির্বাচিত ও ৫জন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি সহ ২২ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি হয়।এই কমিটির মেয়াদকালে’ই জেলাপরিষদ কতৃপক্ষের বাধা-বিবাদ উপেক্ষা করে ততকালীন জেলা প্রশাসক ও সভাপতি আলকামা সিদ্দিকী’র নেতৃত্ব কমিটির সিদ্বান্ত মতে কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদের কাছে ভবনের জন্য অনুদান দাবী করা হলে প্রতিশ্রুত কোটি টাকার অনুদান বাস্তবায়নে বরাদ্দ হলে ততকালীন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।এই সময়ে ভবন নির্মাণে জমির মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদ সচিব বাধা হয়ে দাড়ান।দফায়-দফায় বৈঠক করে জেলা প্রশাসক আলকামা সিদ্দিকী জেলা পরিষদ সচিব কে ভবন নির্মাণে সম্মতি গ্রহণ করেন।
কিছুদিন পর’ই জাতীয় নির্বাচন -২০০৯ সম্পন্ন হলে আওয়ামীলিগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে।পাবলিক লাইব্রেরী পরিচালনা কমিটি চিফহুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এম পি’কে প্রধান অতিথি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ মহসীন আলীকে বিশেষ অতিথি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভবনের নির্মান কাজ শুরু করে।
পাব্লিক লাইব্রেরী ভবনের অনুদান অন্য উপজেলায় কেড়ে নিতে জৈনক এম পি টানাটানি শুরু করলে জেলা আ’লীগে’র ততকালীন সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ ও সাবেক সাংসদ মোঃ আজিজুর রহমান বলিষ্ঠ
ভুমিকা পালন করেন।লাইব্রেরীর নির্বাচিত সহ- সম্পাদক হিসেবে আমি ও সৈয়দ মনসুর আহমদ সুমেল ও সহ সভাপতি ওবায়দুর রহমান ছালিক ভাই কমিটির সিদ্ধান্ত মতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে উন্নয়ন বাস্তবায়নে পরামর্শ
জেনে নিতাম। নির্বাচিত কমিটি কয়েকটি বই মেলা,মেধা প্রতিযোগিতা বই বৃদ্বি, ফান্ড কালেকশন ও কম্পিউটার সেন্টার স্থাপন সহ অনেক দৃশ্যমান কাজ করেছে।
গঠন তন্ত্র সমর্থন করেনা এর পর ও সরাসরি নির্বাচিত কয়েক সদস্য’র অতিমাত্রায় উৎপাত ছিলো বিরক্তিকর।কতিপয় পদলোভীদের সামলাতে অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব হয়নি। কমিটির সহ সম্পাদক দায়িত্বশীল থাকায় ৭ সদস্য বিশিষ্ট গঠনতন্ত্র কমিটিতে ছিলাম।কমিটির সদস্য পদে থাকা একজন ব্যক্তি নানাভাবে পরিচালনা কমিটি কে বিভ্রান্ত করেছে।কমিটি মেয়াদপূর্তি হলে সভাপতি ও জেলাপ্রশাসক মহোদয় সাধারণ সভা আহবান করেন।স্থানীয় রাজনীতিতে এই সময়ে নতুন মেরুকরণ হয়।স্থানীয় সাংসদ মন্ত্রী হলে এই ব্যক্তির ক্ষমতার দম্ভ বেড়ে যায়।সাধারণ সভায় পদবঞ্চিত সেই ব্যক্তির পছন্দের লোকজন দিয়ে আহবায়ক কমিটি করা হয়।রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগন কমিটিতে নিয়ে আসা হয়। অনেকে পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন,তাদের ভুল তথ্য দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিলো।
অনেক কথা বলা যাবে।কিন্তু আমাদের জানতে হবে রাজনীতিবিদ গন দেশ -পরিচালনা করেন।প্রতিস্টান পরিচালনায় থাকেন, কিন্তু যে বিষয়ে যিনি পারদর্শী তিনিকে দায়িত্ব নিতে হয়।ক্ষমতার অপব্যবহার করার ফলে এবং অতিমাত্রায় পদলোভী নাট্য ব্যক্তিত্ব নির্বাচন মুখী পাব্লিক লাইব্রেরী কে অচলাবস্থার দিকে ধাবিত করেছেন।
তিনি নির্বাচনের তপসিল ঘোষনার পর আদালতে মামলা দায়ের করেন।যদিও পরে মাননীয় আদালত মামলা খারিজ করে দেয়।
মামলা খারিজ হওয়ার অনেক দিন অতিবাহিত হলেও পাবলিক লাইব্রেরীর নির্বাচন না হওয়ার পেছনে প্রশাসন ঘেষা আহবায়ক কমিটির নির্বাচিত সদস্য সচিব কে দায়ী করছেন সচেতন সমাজ। এগারো বছর ধরে এই প্রতিস্টানের নাম-পদবী পরিচয় দিয়ে চললেও সভা ডেকে লাইব্রেরীর দুরবস্থা কেনো জানানো হয়নি এই প্রশ্ন সাহিত্য প্রেমী ও পাঠক সমাজের ।
লেখকঃ সাংবাদিক ও সাবেক সহ সম্পাদক মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরী